ছোট ছোট শিশুদের সাথে এবিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।জন্ম থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত একটা শিশুর উপযুক্ত খাবার হয় শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ/ফর্মূলা।শিশুর পাকস্থলীও তার সাথে সাথে প্রতিদিন একটু একটু করে উপযোগী হয়ে উঠে।তাই ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর যখন মাত্র প্রথমবারের মত কোন স্বাভাবিক/সলিড খাবার শুরু করা হয় তখন ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞগণ যেকোন নতুন খাবারে তিনদিনের একটা রুলস ফলো করতে বলেন।যাতে বুঝা যায় শিশুর কোন উপকরণ স্যুট করছে, আর কোনটা করছেনা বা এলার্জি সমস্যা হচ্ছে।
★যেকোন একটা খাবার বা উপকরণ(যেমনঃ চাল,যেকোন একটা ডাল,সবজি ইত্যাদি) পৃথকভাবে সকালের খাবারে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই চা চামচ পরিমাণ খাওয়াতে হবে।এরপর একঘন্টা ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে যে শিশুর ঘাড়,গলা,মুখ বা অন্য কোথাও কোন র্যাশ,ফুসকুড়ি,এলার্জি হচ্ছে কিনা, সামান্য খাওয়ার পরই শিশু বমি করে কিনা,টয়লেট একদম পানির মত পাতলা হয় কিনা।
★যদি এমনকিছু হয় তাহলে বুঝতে হবে শিশুর ওই খাবারটা বা উপকরণটা স্যুট করছেনা।তাই সেই খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।কয়েকমাস পর আবার সামান্য ট্রাই করে দেখতে পারেন স্যুট করে কিনা।
★যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে বুঝতে হবে খাবারটি শিশুর স্যুট করেছে।তখন পরপর আরও দুইদিন একইভাবে খাইয়ে চেক করতে হবে।
★তিনদিনে যদি কোন সমস্যা না হয় তখন ৪র্থ দিন থেকে একই খাবারের পরিমাণ এক চামচ করে বাড়াতে থাকবেন।এটাই Three Day Rules/Test.
এরপর নতুন আরেকটা উপকরণ বা খাবার একইভাবে শুরু করতে হবে।
শিশুর খাবারে নতুন কিছু সংযোজনঃ
শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর প্রথম সলিড নিয়ে যেমন দুশ্চিন্তা হয়, ঠিক তেমনি চিন্তা হয় এরপর আর কি কি খাওয়ানো যায় শিশুকে তা নিয়ে।৬ মাস পূর্ণ হওয়া শিশুকে এভাবে সলিড শুরু করা যায়ঃ
প্রথম দিনঃ ★নরম বা জাউ ভাত/চালের সুজি/ওটমিল
৪র্থ দিনঃ★চালের সুজি + যেকোন ফলের পিউরি(যেমনঃ কলা)বা★চাল+মুগ/মসুর ডালের খিচুরিবা★ওটমিল+যেকোন ফলের পিউরি
৮ম দিনঃ★চাল+মুগ/মসুর ডাল+যেকোন সহজপাচ্য সবজি
এভাবে যেকোন খাবার প্রথমে অল্প পরিমাণে টানা তিন দিন দিতে হবে।এর মাঝে শিশুর গায়ে কোনরকম র্যাশ,এলার্জি,টয়লেটে সমস্যা,বমি,পেটে সমস্যা না হলে বুঝতে হবে খাবারটা শিশুর স্যুট করেছে।এরপর এই খাবারের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে।সাথে নতুন যেকোন একটা উপকরণ যোগ করতে হবে।তাহলে কোন উপকরণটা শিশুর হজম হচ্ছেনা বা এলার্জি হচ্ছে এটা সহজেই বুঝা যায়।
যদি এলার্জি বা র্যাশ বা কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ওই খাবারটি খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে।চাইলে ১০-১৫ দিন পর আবার অল্প দিয়ে দেখতে পারেন।এরপরও না হলে ওই খাবার বন্ধ রাখাই উত্তম।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬-৭ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক খাবার হবে দুই বেলা সামান্য পরিমাণ খাবার।শুরুতে এক টে.চামচ বা দুই টে.চামচ,এরপর ধীরে ধীরে পরিমান বাড়াতে হবে শিশুর চাহিদা বুঝে।
৮-১০ মাস বয়সী শিশুর খাবার হবে ২৫০ মিলি বাটির আধা বাটি করে।অর্থ্যাৎ এক বেলায় ১২৫ মিলি।দেখা যায় অনেক শিশু একবারে খায়না,সেক্ষেত্রে অল্প পরিমানে কয়েকবারে খাওয়ানো যেতে পারে।অর্থ্যাৎ কয়েকবারে মোট ২৫০ মিলি খাবার।তবে কখনই জোর করে নয়।এবং সব খাবার একসাথে নয়।
১০+ মাস বয়স থেকে তিনবেলা ফুল মিল খাবার,২৫০ মি.লি. বাটির এক বাটি করে প্রতিবেলায়।সাথে দুই বেলা হালকা নাস্তা,হালকা অর্থ হালকা নাস্তা,পেট ভরার মত এত খাবার নয়।
৬-৮ মাস বয়সী শিশুর খাবার একটু নরম,মিহি বা ব্লেন্ডেড টেক্চারের হবে।তবে একদম পাতলা খাবার নয়।আপনার ৬-৮ মাস বয়সী শিশুকে দিতে পারেনঃ
★ নরম ভাত/ওটমিল/সুজি/সিরিয়াল★আলু সেদ্ধ★ডিমের কুসুম★মিস্টিকুমড়া ★গাজর★মিস্টি আলু★কলা★ডাল★চিকেন কিমা★মাছ
শিশুর খাবারে একটু মনোযোগ এবং সময় অবশ্যই প্রয়োজন।
এবার ধরুন,উপরের কোনভাবে আপনি শিশুর খাবারের উপকরণ টেস্ট করেননি বা সুযোগ হয়নি,তাহলে আমার তৈরি খাবার কিভাবে শুরু করবেন তা নিয়ে চিন্তিত।
আমার তৈরি খাবার শিশুকে কিভাবে শুরু করবেন
এক্ষেত্রেও একইভাবে খাবার খাওয়াবেন।ধরুন,আমার তৈরি তিনটি খাবার নিয়েছেন।কোনটা শুরুতে খাওয়াবেন বা কোনটা দিয়ে শুরু করা উচিত তা আমি জানিয়ে দিব শিশুর বয়স এবং অন্যান্য বিষয় জেনে।এই খাবারটা রান্না করার পর ১ টে.চামচ খাওয়াবেন বেবীকে।অবশ্যই সকাল বেলায় এবং এই নতুন খাবার চলাকালীন বেবীকে অন্যকোন নতুন খাবার/শস্য/সবজি/ফল দিবেন না।খাওয়ানোর এক-দুই ঘন্টা পর্যন্ত খেয়াল করবেন যে শিশুর শরীরে কোন র্যাশ,এলার্জি,ফুসকুড়ি হয় কিনা,সামান্য খাওয়ার পরই শিশু বমি করে কিনা, টয়লেট খুব বেশি পাতলা বা হার্ড হয় কিনা।
যদি এমন কোন সমস্যা হয় তাহলে ওই খাবারটা খাওয়ানো থেকে বিরত থাকবেন,মাসখানেক পর আবার ট্রাই করবেন একই নিয়মে।আর যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে তিনদিন সকাল বেলায় একই খাবার একইভাবে খাওয়াবেন।এই তিনদিনেও কোন সমস্যা না হলে ৪র্থ দিন থেকে একচামচ করে পরিমাণ বাড়াবেন।৫ম দিনে এই খাবারের সাথে নতুন আরেকটা খাবার একই নিয়মে একই পরিমাণে শুরু করবেন।এভাবে একটা একটা খাবার টেস্ট করবেন।এরপর থেকে ধীরে ধীরে একবেলা বা দুইবেলা খাওয়াতে পারেন।
ভুলেও একই সাথে নতুন সব খাবার বা নতুন খাবারের সাথে নতুন কোন সবজি,ফল,শস্য খাওয়াবেন না।নইলে বুঝা যাবেনা ঠিক কোন খাবারটা শিশুর স্যুট করছেনা বা সমস্যা হচ্ছে।
অনেকেই ভালোভাবে বুঝিয়ে বলার পরও দেখা যায় একটা খাবার হয়তো দিচ্ছেন কিন্তু বাটি ভরে খাওয়াচ্ছেন শুরুতেই।হয়তো এত পরিমাণে নতুন খাবারটা শিশুর পাকস্থলী ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারেনা,কিন্তু অল্প পরিমাণে ধীরে ধীরে খাওয়ালে পাকস্থলীও ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যেত।কিন্তু একসাথে বাটি ভরে বা ফুল মিল পরিমাণে খাওয়ালে পাকস্থলী হঠাৎ করে এই নতুন খাবারের সাথে মানিয়ে নিতে পারেনা,সুগঠিতও হতে পারেনা।ফলাফলঃ হজমে সমস্যা,আমাশয় টাইপ বা ডায়রিয়া,বদ হজম।
শিশু এবং খাবার কোনটাই পালিয়ে যাচ্ছেনা,তাই তাড়াহুড়া না করে ধীরে ধীরে সতর্কতার সাথে খাবার শুরু করা উচিত।এই পদ্ধতি ৬+ মাস থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত যেকোন শিশুর ক্ষেত্রে এবং যেকোন নতুন খাবারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আবার দেখা যায়,শিশুর খাবার বাটি,চামচ এবং যিনি পরিবেশন ও খাওয়াচ্ছেন তার হাত ঠিকমত ধোয়া হয়না।শিশু এবয়সে সামনে যা পায় তাই হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করে এবং মুখে দেয়।ফলে এভাবেও জীবাণু সংক্রামিত হতে পারে।তাই শিশুর সব বিষয়েই একটু খেয়াল রাখা উচিত।