কালোমানিকের গপ্পো
“কালোমানিক হাত পেতেছে চাঁদ ধরতে চায়
বামন কি আর হাত বাড়ালে চাঁদের দেখা পায়।”
না,কালোমানিক নয়,বরং এবার কালোমানিকের গুণে পাগল হয়ে বামন নিজে এসেই ধরা দিবে।বলছিলাম কালোমানিকের কথা।আমিই এর গুণে মুগ্ধ হয়ে কালোমানিক নাম দিয়েছি।
★আজ থেকে ১০ হাজার বছর পূর্বে চীন নামক এক দেশে কালো মানিকের খোঁজ পাওয়া যায়।তখনকার সময়ে রাজা রাজ্যবর্গের রাজত্ব চলে।রাজাই সব।সেই রাজাগণ নিজেদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ে বেশ সচেতন থাকতেন।
★খুব সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দীতে চিং এবং মিং রাজার যুগে, একদিন এক লোক এক মুঠো কালোমানিক ছড়িয়ে দিলেন তার ক্ষেতে।ওমা সেকি!কালোমানিকে ভরে গেল তার ক্ষেত!বেচারা লোক প্রতিটা কালোমানিক একত্র করে নিয়ে গেলেন রাজমহলে।রাজার দরবারের গবেষক,চিকিৎসকগণ অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা,গবেষণা করার পর যা জানালেন তা শুনে তো রাজা একদম আকাশ থেকে পড়ার মত দশা!
★চিকিৎসকগণ জানালেন,”হুজুর,এতো যে সে মানিক নয়,এ হলো কালো মানিক!এতে রয়েছে সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু লাভের রহস্য!এতো সাক্ষাৎ সঞ্জীবনী! ব্যস!আর যায় কোথায়!রাজা হুকুম দিয়ে বসলেনঃ আজ থেকে রাজ্যে রাজ পরিবার ছাড়া আর কেউ এই কালোমানিককে চাষ করতে,খেতে এবং বিক্রি করতে পারবেনা।যে কথা সেই কাজ!রাজপরিবার ছাড়া আর কেউ কালোমানিককে একটু চেখেও দেখতে পারলোনা।চাইলেই দণ্ডাদেশ!
★জ্বি হ্যাঁ,কালোমানিক বলতে উচ্চমাত্রায় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কালো চাল/Forbidden Rice/Black Rice এর কথা বলছি।।রাজ পরিবার ব্যতীত বাকি সবার জন্য এই চাল খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল বলে একে বলা হত Forbidden Rice.এতে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণের এ্যান্থোসায়ানিনের জন্য এর রং কালো, এবং তাই Black Rice বলা হয়।
★কালো চাল বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে উৎপাদিত হয়।আমাদের দেশে আছে এরই এক প্রজাতি “কালো বিন্নি চাল।” পার্বত্য এলাকায় এই ধানের চাষ হয় তবে স্বল্প পরিসরে।
এবার চলুন জেনে নিই কেন একে কালোমানিক বলছিঃ
ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে কালো চাল অনন্য।এ্যান্থোসায়ানিন মূলতঃ ক্যান্সার সেল প্রতিরোধ করে।
এ চালে শর্করার পরিমাণ সাদা ও লাল চালের চেয়ে কম, অন্যদিকে আঁশ ও ভিটামিন বি-এর পরিমাণ বেশি।
এ চাল আয়রন সমৃদ্ধ।ফলে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য বজায় রেখে রক্তাল্পতা দূর করে।
আমিষের পরিমাণ অন্যান্য চালের চেয়ে প্রায় ৮.৫ ভাগ বেশি।
এতে চিনির পরিমাণ খানিকটা কম এবং উচ্চআঁশ সমৃদ্ধ খাবার।ফলে হৃদরোগ,ডায়বেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
এতে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’ যা ত্বক,চোঁখের সুরক্ষাসহ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এটি গ্লুটেন ফ্রি।ফলে হজমে সহায়তা করে।
ফ্ল্যাভনয়েড ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট সম্পন্ন।
এটি লো জিআই শস্য।
এতে বিদ্যমান স্পেসিফিক এন্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে।
কালোমানিকের খুঁতঃ
বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় খাদ্যপ্রাণে ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও কালেমানিকের একটা ছোট্ট খুঁত আছে।সেটা হল এতে উপস্থিত ফাইটিক এসিডের আধিক্য।এই ফাইটিক এসিড মানবদেহকে অন্যান্য মিনারেলস(আয়রন,জিংক,ক্যালসিয়াম) শোষণে বাঁধা দেয়।।তবে হ্যাঁ চালের এই ফাইটিক এসিডকে দূর করারও একদম প্রাকৃতিক কিছু পদ্ধতি রয়েছে।এটা বলবনা,এটা সিক্রেট।।
আমার তৈরি আয়রন সুজি তৈরির আগে অবশ্যই কালো চালের ফাইটিক এসিড যতটা সম্ভব দূর করে নিই।সাথে উপকরণ হিসেবে আরও আছেঃ
★উচ্চ ফাইবার বিরই চাল এবং
★লাল বিন্নি চাল
৬+ মাস যেসব শিশুর অল্পতেই পেট গরম হয়,হিমোগ্লোবিন স্বল্পতা,আয়রন স্বল্পতা, তাদের জন্য খুবই ভালো একটি খাবার এই আয়রন সুজি।এমনকি বড়রাও খেতে পারবেন।
২ টেবিল চামচ আয়রন সুজি ১৫০ মি.লি পানিতে মিশিয়ে চিনি/মিছরী যোগ করে রান্না করতে হবে।ফুটে উঠে ঘন হয়ে এলে নামিয়ে খাওয়াতে হবে।
তো,এবার বলুন, কেমন লাগলো কালোমানিক কে?
Reviews
There are no reviews yet.