সে বহুকালের আগের কথা।ভারতবর্ষে তখন মধু বরসায়।উপমহাদেশের ইন্দোনেশিয়া,জাভা,মোলাক্কাস এবং আরও কিছু দ্বীপে এমন পরিমান মশলা জন্মাত যা আর কোথাও হত না।এই মশলারও কত বহর!এসব দ্বীপেই কেবল মশলাগুলো জন্মাতো,পৃথিবীর আর কোথাও না।যেমনঃ মালাবার অঞ্চলে প্রচুর গোলমরিচ এবং এলাচ উৎপাদন হত।জাভাতে হত লবঙ্গ।
✅সেসময়ে এসব দ্বীপ,গুজরাট,বিজয়নগর ইত্যাদি জায়গা থেকে মশলা এসে জমা হত ভারতের কালিকট বন্দরে।কালিকট তখন রমরমা বন্দর বা কেন্দ্র বলা যায়।আরব বণিকরা কালিকট থেকে এসব মশলা সংগ্রহ করে জাহাজ ভর্তি করে মালাক্কা হয়ে লোহিত সাগরের পাড়ের দেশগুলোতে বিক্রি করতো।এসবের মধ্যে মিশর ছিল অন্যতম। আরব বণিকদের নেওয়া মশলা মিশরের বাজার থেকে ইউরোপীয় বণিকরা কিনে নিয়ে সমগ্র ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিক্রি করতো।
কেননা আমাদের উপমহাদেশীয় এই মশলাগুলোর চাহিদা সেই প্রাচীনকাল থেকেই।ইউরোপীয়রা তাদের মাছ মাংস রান্নায় এই মশলা ছাড়া চলতেই পারতনা।স্বাভাবিক ভাবেই মশলার চাহিদা ছিল তুঙ্গে।সেই প্রাচীনকাল থেকে এখন অবধি পর্যন্ত আমাদের উপমহাদেশের মশলার খ্যাতি।দেশ ভাগ হয়েছে,প্রদেশ হয়েছে,হয়েছে নানা উত্থান পতন,কিন্তু মশলার সুখ্যাতি আজও আছে।
✅আমাদের এই বাঙালি রান্নার কথাই ধরুন।মশলা ছাড়া কি চলে একদিনও?নাকি ভাবা যায়!এযাবত যত মশলা ব্যবহার করেছি,তাতে এটা বুঝেছি যে,মশলা এ উপমহাদেশের যে অঞ্চলেরই হোক না কেন,মশলার কাঁচামাল যদি খাঁটি হয়, ভেজাল না মিশ্রিত হয়,তবে সেই মশলার রং এবং স্বাদ হবে অনন্য।
✅মশলা এবং আমিঃ
প্রধানতঃ নিজের বাসায় ব্যবহারের জন্যই এই কাজ করা।বাজারের মশলায় যে কত পরিমাণ ভেজাল সেটা তো সবারই জানা।তাই প্রতিদিনের রান্নায় ভেজাল এবং কেমিকেল ফ্রি খাঁটি মশলা যেন আমার মত আরও অনেকেই ব্যবহার করতে পারে সেই হিসেবেই প্রোডাক্ট লাইনে মশলা রাখা।বাচ্চার খাবার রান্না থেকে নিজেদের রান্নায় একটা দিন নেই যে মশলা ছাড়া চলছে,তা যত কম পরিমাণেই হোক।
✅আমার মশলার কিছু কথাঃ
না,আমি পাহাড়ি বা ভারতের কোন মশলা ব্যবহার করছিনা।আমাদের নিজেদের এলাকায়,বিশেষকরে চরাঞ্চলে উৎপাদিত দেশি মশলাকেই কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছি।
নিজেদের গ্রামে এবং নিজেদের চরাঞ্চলে চাষ হওয়া দেশি মরিচ,ধনিয়া।হলুদটা একদম গৃহস্থ বাড়ির চাষ করা হলুদ,যাতে কোন ক্রোমেট ঘষা হয়না,যা হলুদের আসল কালার তাই হয়।আর জিরা টা হল প্রিমিয়াম তুর্কি জিরা,যার স্মেল এবং স্বাদ দুটোই দারুণ।
চাইলেই পাইকারি বাজারে অহরহ পাওয়া হলুদ,কেরালা হরিয়ানার মরিচ কিনে কাজ করতে পারতাম,কিন্তু এমন কাজ আমার পছন্দ না।তাই নিজেদের নিজস্ব জায়গায় উৎপাদিত মরিচ,হলুদ ধনিয়া নিয়ে কাজ শুরু করা।😊
✅প্রতি সপ্তাহে পরিমিত পরিমাণে তৈরি করা হবে,তাই প্রতি সপ্তাহেই মশলা পাচ্ছেন একদম ফ্রেশ ব্যাচের।যা কিনা বাজারের মশলায় কখনই সম্ভব না।
খাবার হোক প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর এবং নির্ভেজাল।